স্ট্রোকজনিত প্যারালাইসিস রোগীর আধুনিক
-----------চিকিৎসা------------
বিশ্বজুড়ে পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, স্ট্রোকজনিত মৃত্যুর সংখ্যা ৩য় এবং স্ট্রোকের কারণে স্নায়ুজনিত অক্ষমতার অবস্থান ২য়। মেডিক্যাল ভাষায় স্ট্রোককে সেরেব্রো ভাস্কুলার ডিজিজ বলে ।ব্রেন বা মস্তিষ্কের স্ট্রোক সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে-
১। ইস্কেমিক স্ট্রোক
- যেখানে মস্তিষ্কের মধ্যকার ধমনিগুলোতে রক্ত চলাচল কম হয়।
২। হেমরেজিক স্ট্রোক
- যেখানে মস্তিষ্কের মধ্যকার ধমনিগুলো ছিঁড়ে রক্তক্ষরণ হয়।
মস্তিষ্কের স্ট্রোক কেন হয়?
বিভিন্ন কারণে ব্রেন বা মস্তিষ্কের স্ট্রোক হতে পারে।যেমনঃ
- অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ
- অনিয়ন্ত্রিত ডায়বেটিস
- হাইপারলিপিডেমিয়া বা আথেরস্কেলরসিস
- অবেসিটি বা অধিক ওজন
- ধূমপান
- মানসিক দুশ্চিন্তা- নিদ্রাহীনতা
- এথেরএম্বলিজম বা কারডিওএম্বলিজম
- ব্রেন টিউমার
- হেড ইনজুরি বা আঘাতজনিত
- মেনিনজাইটিস
- এইচআইভি
- হেমাটোলজিক্যাল ডিস-অর্ডার
মস্তিষ্কের স্ট্রোকে রোগীর কি কি উপসর্গ দেখা যায়?
- রোগীর এক পাশের হাত এবং পা আংশিক বা প্যারালাইজড হয়ে যায়।
- রোগী আক্রান্ত হাত ও পা নাড়াতে পারে না।
- আক্রান্ত হাত ও পায়ের ওপর ভর দিতে পারে না।
- সঠিকভাবে কথা বলতে পারে না অনেকক্ষেত্রে মুখ বাঁকা হয়ে যায়।
- খাবার খেতে কষ্ট হয়।
- প্রস্রাব ও পায়খানায় নিয়ন্ত্রণ থাকে না।
- অনেক সময় মাথা বাথা করে, বমি ভাব হয়।
- ঘুম স্বাভাবিকভাবে হয় না।
- কিছু কিছু রোগী মেমরি বা পূর্বের ইতিহাস ভুলে যায় বা পরিচিত মানুষদের চিনতে পারে না।
রোগ নির্ণয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষাঃ
এই রোগের ক্ষেত্রে কিছু প্যাথলজিক্যাল ও রেডিওলজিক্যাল পরীক্ষা খুবই জরুরী।
যেমন
১। প্যাথলজিক্যাল
- সি বি সি উইথ ই এস আর - সেরাম কোলেস্টেরল লেভেল - সেরাম ইলেক্ট্রোলাইট লেভেল
- সেরাম ক্রিয়েটিনিন এবং ইউরিয়া ইত্যাদি।
২। রেডিওলজিক্যাাল
- কম্পিউটেড টমোগ্রাফি বা সিটি স্ক্যান এটি খুবই জরুরী। কারণ এর মাধ্যমে স্ট্রোকটি কি ধরনের (ইস্কেমিক স্ট্রোক অথবা হেমরেজিক স্ট্রোক) তা নির্ণয় করা যায়।
- ম্যাগনেটিক রিজনেন্স ইমাজিং (এম আর আই)এর মাধ্যমে আরও সূক্ষ্মভাবে মস্তিষ্কের অবস্থা বোঝা যায় ।
চিকিৎসাঃ
চিকিৎসার ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয় খুবই জরুরী। কারণ ইস্কেমিক স্ট্রোক অথবা হেমরেজিক স্ট্রোক উভয়ের চিকিৎসা ভিন্ন ভিন্ন এবং সেটা একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রোগের ধরন অনুযায়ী চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।
স্ট্রোক পরবর্তী প্যারালাইসিস বা পক্ষাঘাতগ্রস্থ রোগীকে আবার পূর্বের স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরিয়ে আনার জন্য ওষুধের পাশাপাশি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা হলো আধুনিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা। এই চিকিৎসার মাধ্যমে একজন স্ট্রোক পরবর্তী প্যারালাইসিস বা পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীকে সম্পূর্ণ পুনর্বাসন করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের তত্ত্বাবধায়নে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে নিয়মিত দিনে ২ - ৩ বার ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিতে হতে পারে ২-৬ মাস।
এক্ষেত্রে একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক রোগীকে পুনর্বাসনের জন্য একটি ট্রিটমেন্ট প্ল্যান তৈরি করে থাকেন। যার মধ্যে
- ম্যানুয়াল থেরাপি
- থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ
- প্রগ্রেসিভ কন্ডিশনাল এক্সারসাইজ
- পারালাল বার এক্সারসাইজ
- গেইট ট্রেনিং বা গেইট রি-এডুকেশন এক্সারসাইজ
- ইলেক্ট্রথেরাপি বা ইলেক্ট্রিকাল ইস্টিমুলেশান থেরাপি
- অকুপেশনাল ট্রেনিং
- বাউএল এবং
- ব্লাডার ট্রেনিং ইত্যাদি ।
পরামর্শ :
১। রোগীকে পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়াতে হবে।
২। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
৩। চর্বি জাতীয় খাদ্য পরিহার করতে হবে।
৪। ধূমপান ও তামাক জাতীয় দ্রব্য পরিহার করতে হবে।
৫। শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
৬। শেখানো মতো ব্যায়াম করতে হবে।
No comments:
Post a Comment