এ এস ডি র ধরণ

এ এস ডি র ধরণগুলো হল:

১) অটিস্টিক ডিজঅর্ডার (‘ক্লাসিক অটিজম’ নামেও পরিচিত):

এটা অটিজমের সাধারণ ধরন। অটিস্টিক ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত লোকেদের সাধারণত গুরুত্বপূর্ণভাবে ভাষাগত বাধা থাকে। এক্ষেত্রে সামাজিক ও ভাষা বিনিময়ে প্রতিবন্ধকতা থাকে এবং অস্বাভাবিক আচরণ দেখা যায় । এই রোগে আক্রান্ত অনেক লোকের বুদ্ধিগত অক্ষমতা থাকতে পারে।

২) এসপারজার সিন্ড্রোম:

এসপারজার সিন্ড্রোমে আক্রান্ত লোকেদের অটিস্টিক ডিজঅর্ডারের হালকা উপসর্গ থাকে। এদের মধ্যে সামাজিক প্রতিবন্ধকতা এবং অস্বাভাবিক আচরণ দেখা দিতে পারে। যাইহোক, এদের সাধারণত ভাষা বা বুদ্ধিবৃত্তিক অক্ষমতা বা সমস্যা থাকে না।

৩) পার্ভেসিভ ডেভোলাপমেন্টাল ডিজঅর্ডার (ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি সংক্রান্ত রোগ – অন্যভাবে চিহ্নিত করা যায় না (পি ডি ডি -এন ও এস নামে) :

এটিকে “এটিপিকাল অটিজম” বলা হয়। যেসব লোকেদের মধ্যে অটিস্টিক ডিজঅর্ডার বা এসপারজার সিন্ড্রোম নির্ণায়ক কিছু উপসর্গ দেখা যায় , কিন্তু সব উপসর্গ দেখা যায় না , তাদের সাধারণত: পি ডি ডি -এন ও এস হিসাবে রোগ নির্ণয় করা হতে পারে। পি ডি ডি -এন ও এস আক্রান্ত লোকেদের মধ্যে সাধারণত অটিস্টিক ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত লোকেদের থেকে কম এবং হালকা উপসর্গ দেখা যায়। এই উপসর্গগুলি শুধুমাত্র সামাজিক ও ভাষা বিনিময় সংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে।


উপসর্গ – লক্ষণঃ

এ এস ডি সাধারণত একজন লোকের ৩ বছর বয়স বা তার আগে শুরু হয়ে শেষ জীবন পর্যন্ত থাকতে পারে,যদিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উপসর্গ কমে যেতে পারে। এ এস ডি আক্রান্ত শিশুদের অধিকাংশর জীবনের প্রথম কয়েক মাসের মধ্যে ভবিষ্যতে সমস্যার ইঙ্গিত দেখা যেতে পারে।অধিকাংশ এ এস ডি আক্রান্ত শিশুদের তাদের জীবনের প্রথম কয়েক মাসের মধ্যেই ভবিষ্যতে সমস্যার সংকেত দেখা যায়। অন্যদের মধ্যে , ২৪ মাস বা তারও পরে উপসর্গ দেখা যেতে পারে। কিছু এ এস ডি আক্রান্ত শিশুদের ক্ষেত্রে প্রায় ১৮ থেকে ২৪ মাস বয়স পর্যন্ত স্বাভাবিক বিকাশ হচ্ছে বলে মনে হয় এবং তারপর তারা নতুন দক্ষতা অর্জন বন্ধ করে দেয় অথবা পূর্বের অর্জিত দক্ষতা হারিয়ে ফেলে।
একজন এ এস ডি আক্রান্ত শিশুর মধ্যে যা যা দেখা দিতে পারে :
১২ মাস বয়সেও তার নাম ধরে ডাকলে প্রতিক্রিয়া করে না
১৮ মাস বয়সে খেলতে পারে না
এরা সাধারণত অন্যের চোখের দিকে সোজাসুজি তাকানো এড়িয়ে যায় এবং একা থাকতে পছন্দ করে
এই শিশুরা অন্য মানুষের অনুভূতি বুঝতে বা তাদের নিজস্ব অনুভূতি নিয়ে কথা বলতে অসুবিধা অনুভব করে
এই শিশুরা দেরী করে কথা বলা এবং ভাষা ব্যবহারের দক্ষতা অর্জন করতে পারে
শব্দ বা ছোটো ছোটো বাক্য বারবার বলতে থাকে (ইকোলালিয়া)
প্রশ্নের সঙ্গে সম্পর্কহীন উত্তর দেয়
কোনো ছোটখাটো পরিবর্তন পছন্দ করে না
কিছু বদ্ধমূল আগ্রহ থাকে
কিছু কিছু সময় তারা তাদের দুই হাতে ঝাপট মারতে থাকে, তাদের শরীর দোলাতে থাকে, অথবা চক্রাকারে ঘোরাতে থাকে
কিছু শব্দের, গন্ধ, স্বাদ, চেহারা বা অনুভবের সঙ্গে অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে
কারণ
এ এস ডি হওয়ার সঠিক কারণ এখনো পর্যন্ত জানা যায় নি , কিন্তু এটা জেনেটিক এবং পরিবেশগত কারণের জন্য সম্ভবত হতে পারে। এই রোগের সঙ্গে যুক্ত জিনগুলিকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এ এস ডি আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে গবেষণায এর কারণ মস্তিষ্কের বিভিন্ন অঞ্চলে অনিয়মিতিভাবে পাওয়া গেছে।
এ এস ডি আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে অন্যান্য গবেষণায় দেখা গেছে মস্তিষ্কের সেরোটোনিন বা অন্যান্য নিউরোট্র্রান্সমিটার অস্বাভাবিক মাত্রায় আছে।
এই সব অস্বাভাবিকতা ধারণা দেয় যে ভ্রুণ বৃদ্ধির প্রারম্ভিক অবস্থায় স্বাভাবিক মস্তিস্কের বৃদ্ধিতে গোলমাল দেখা যায় জিনের অস্বাভাবিকতার জন্য যা মস্তিস্কের বৃদ্ধি এবং মস্তিস্কের কোষগুলির নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ করে। সম্ভবত জিন ও পরিবেশগত উপাদানের প্রভাবে এ এস ডি রোগের সৃষ্টি হয়।

রোগ নির্ণয়:

এ এস ডি নির্ণয় করা কঠিন হয় কারণ এখানে কোনো ডাক্তারী পরীক্ষা যেমন রক্ত পরীক্ষার মতো কোনো পরীক্ষা এক্ষেত্রে নেই যার দ্বারা এই রোগ নির্ণয় করা যেতে পারে। চিকিৎসক শিশুর আচরণ এবং বৃদ্ধির উপর ভিত্তি করে এই রোগ নির্ণয় করতে পারেন।
যাইহোক, শিশুদের একটি শ্রবণযোগ্য মূল্যায়ন এবং অটিজমের জন্য একটি বাছাই পরীক্ষা করা যেতে পারে যেমন শিশুদের জন্য অটিজমের চেকলিস্ট।

করনীয়ঃ

এই রোগের কোনো নিরাময় নেই। যাইহোক, এটা ঔষধ এবং বিশেষজ্ঞ-শিক্ষার সাহায্যে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
প্রারম্ভিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে শিশুর সেবা করলে শিশুর উন্নতিতে সাহায্য হয়। এই সকল সেবাযত্ন বলতে শিশুদের কথা বলা, হাঁটতে পারা এবং অন্যদের সঙ্গে কথা বিনিময় করা বোঝায়।
সুতরাং, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে প্রথমে শিশু চিকিৎসকের সাথে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কথা বলা।
অটিজম কি পুরোপুরি নিরাময় সম্ভব? চিকিৎসার জন্য কোথায় যাবেন?
অতি দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে অটিজম পুরোপুরি নিরাময় করা আজ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। কিন্তু সঠিক টেস্ট, চিকিৎসা, থেরাপি এবং কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে শিশুদের ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ জীবন আচরণ স্বাভাবিক গন্ডির মধ্যে নিয়ে আসা সম্ভব। বর্তমানে দেশের অনেক শিশুই অটিস্টিক হওয়া সত্তেও স্বাভাবিক জীবনের সাথে মানিয়ে চলতে সক্ষম হচ্ছে।

1 comment:

Powered by Blogger.