অধিকাংশ মানুষ জীবনের কোন না কোন সময় ঘাড় ব্যথায় ভুগে থাকেন। জীবনে কখনো ঘাড় ব্যথায় ভোগেননি এমন লোকের সংখ্যা খুবই কম। ঘাড় ব্যথা বর্তমানে একটি প্রচলিত সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঘাড় ব্যথার কারণে মানুষের দৈনন্দিন কাজের মধ্যে অনেক প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়, এমনকি আক্রান্ত ব্যক্তির কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়। মেরুদন্ডের ঘাড়ের অংশকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় সারভাইক্যাল স্পাইন বলা হয়। মেরুদন্ডের উপরের সাতটি কশেরুকা ও দুই কশেরুকার মাঝখানের ডিক্স, পেশি ও লিগামেন্ট নিয়ে ঘাড় গঠিত। সারভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস( এই অংশের কশেরুকা এবং ডিস্কের ক্ষয় রোধ) কে ঘাড় ব্যথার সাধারণ কারণ হিসেবে ধরা হয়। তবে ঘাড় ব্যথার জন্য বিভিন্ন ফ্যাক্টর দায়ী।
ঘাড় ব্যথা কেন হয়?
ঘাড় ব্যথা অনেক কারনেই হতে পারে। বয়স অনুযায়ী ঘাড় ব্যথা ভিন্ন ভিন্ন কারনে হয়ে থাকে।শিশুদের ক্ষেত্রে হঠাৎ ঘাড়ের মাংস পেশী টেনে ধরা বা টরটিকলিস,তরুনদের ক্ষেত্রে সারভাইক্যাল ডিস্ক প্রলাপস এবং বয়স্কদের ক্ষেত্রে হাড় ক্ষয় বা সারভাইক্যাল স্পনডিলাইসিস ও সার্ভাইক্যাল ডিস্ক ডিজিজ ইত্যাদি কারণে ঘাড় ব্যথা হয়ে থাকে।
ঘাড় ব্যথার প্রকারভেদ:
ঘাড় ব্যথাকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
১। মেকানিক্যাল নেক পেইন বা ঘাড় ব্যথা।
২। প্যাথলজিক্যাল নেক পেইন বা ঘাড় ব্যথা।
মেকানিক্যাল নেক পেইন বলতে ঘাড়ের কাঠামো পরিবর্তন জনিত ব্যথাকে বুঝায়।
বেশিরভাগ অফিস মানেই কম্পিউটারের সামনে ঘন্টার পর ঘন্টা কাজ করা। দীর্ঘ সময় একই ভঙ্গিতে কাজ করার কারণে ঘাড়ের মাংসপেশির মধ্যে দীর্ঘ সময় চাপ পড়ে। এতে মাংসপেশি স্পাজম, এমনকি দুর্বল হয়ে যায়। যার ফলে চাপ মাংসপেশি থেকে মেরুদন্ডে চলে আসে। দীর্ঘমেয়াদী এই চাপ ঘাড়ের ক্ষয় কে প্রভাবিত করে এবং ডিস্ক এর পরিবর্তন ঘটায়। মেকানিক্যাল নেক পেইন এর কারণসমূহ হল-
✓সার্ভাইক্যাল স্পন্ডিলোসিস বা ঘাড়ের হাড়ের ক্ষয় রোধ
✓সার্ভাইক্যাল ডিস্ক ডিজিজ বা দুই কশেরুকার মধ্যবর্তী ডিস্কের ক্ষয় রোধ
✓সার্ভাইক্যাল ডিস্ক প্রলাপস বা ডিস্কের স্থানচ্যুত হওয়া।
✓সারভাইক্যাল স্পনডাইলোলিসথেসিস বা ঘাড়ের হাড়ের স্থানচ্যুত হওয়া
প্যাথলজিক্যাল নেক পেইন বলতে ঘাড়ের কাঠামোর বায়োকেমিক্যাল বা জীবাণুঘটিত পরিবর্তনকে বুঝায়। এই ধরনের ঘাড় ব্যথাকে স্বাভাবিক ভাবে দেখা যাবে না। কারণ এ ধরনের ঘাড় ব্যথায় দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। তাই আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসের শরণাপন্ন হতে হবে। তা না হলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে পারেন। যেমন ঘাড়ে ক্যান্সারের কারণে যদি ঘাড় ব্যথা হয়, আর তা সঠিক সময় চিকিৎসা করানো না হয়। তাহলে ক্যান্সার সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং আক্রান্ত ব্যক্তি মারাত্মকভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তেই পারেন।
প্যাথলজিক্যাল নেক পেইনের কারণ সমূহ হলো-
✓ম্যালিগন্যান্ট টিউমার বা ক্যান্সার অফ সার্ভাইক্যাল লিম্ফ নোড
✓টিবি অফ সারভাইক্যাল স্পাইন
✓টিবি অফ সার্ভাইক্যাল লিম্ফ নোড
✓রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস অফ সারভাইক্যাল স্পাইন
✓এনকাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস
✓অস্টিওপোরোসিস
✓ফাইব্রোমায়ালজিয়া
✓রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস অফ সারভাইক্যাল স্পাইন
✓এনকাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস
✓অস্টিওপোরোসিস
✓ফাইব্রোমায়ালজিয়া
ঘাড় ব্যথার প্রতিকার:
ঘাড় ব্যথার চিকিৎসা এর কারণ গুলোর উপর নির্ভর করে। চিকিৎসার মূল লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়।
✓ব্যথা এবং অন্যান্য উপসর্গ নিরাময় করা
✓ঘাড়ের মুভমেন্ট স্বাভাবিক করা
ঘাড় ব্যথার ক্ষেত্রে সমন্বিত চিকিৎসা অনেক গুরুত্তপূর্ন।অধিকাংশ ঘাড় ব্যথা সমন্বিত চিকিৎসায় ভালো হয়ে যায়
ঘাড় ব্যথার ক্ষেত্রে সমন্বিত চিকিৎসা অনেক গুরুত্তপূর্ন।অধিকাংশ ঘাড় ব্যথা সমন্বিত চিকিৎসায় ভালো হয়ে যায়
ঘাড় ব্যথার সমন্বিত চিকিৎসা হল-
✓মেকানিক্যাল নেক পেইন এর ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা একটি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বিহীন আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা মেকানিক্যাল কারণগুলোর উপর নির্ভর করে। এখানে বিভিন্ন ম্যানুয়াল টেকনিক, থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ এবং ইলেক্ট্রো থেরাপিউটিক মোডালিটিসের মাধ্যমে চিকিৎসা দেয়া হয়। হাড় ক্ষয় জনিত ঘাড় ব্যথার ক্ষেত্রে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি জাতীয় ওষুধ খাওয়া যেতে পারে।
✓প্যাথলজিক্যাল নেক পেইনের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট প্যাথলজির চিকিৎসা করতে হবে। ব্যথার জন্য জরুরি ভিত্তিতে পেইন কিলার খাওয়া যেতে পারে। তবে অবশ্যই তা চিকিৎসকের পরামর্শ মতো খেতে হবে।
সমন্বিত চিকিৎসা ব্যর্থ হলে বা ব্যথা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকলে , মাংসপেশী দুর্বল হয়ে গেলে বা শুকিয়ে গেলে এবং প্রসাব -পায়খানার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে সার্জিক্যাল চিকিৎসা আবশ্যকীয় হয়ে পড়ে।
ঘাড় ব্যথা প্রতিরোধ করতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম মেনে চলা দরকার, তা হলো-
১। মাথা সামনের দিকে ঝুঁকে দীর্ঘ সময় কোন কাজ করবেন না। প্রতি ৩০ মিনিট অন্তর এক মিনিট বিশ্রাম নিন এবং সে সময় ঘাড়কে ডানে-বামে ও উপর-নিচে নাড়াচাড়া করে নিন।
২। কম্পিউটারে কাজ করলে, কম্পিউটারের মনিটর চোখের সমান্তরাল বরাবর রাখতে হবে। যেন ঘার কে সামনে বা নিচে ঝুকাতে না হয়।
৩। ঘুমানোর সময় অতিরিক্ত উঁচু বা নিচু বালিশ ব্যবহার করবেন না। কারণ উঁচু বা নিচু বালিশ ঘাড়ের বক্রতা কে নষ্ট করে দেয়। বালিশের উচ্চতা এমন হতে হবে, যেন মাথা ও পীঠ একই সমান্তরালে থাকে।
৪। মাথার ওপর ওজন বহন করবেন না।
৫। সেলুনে কখনোই ঘাড় ফুটাবেন না।
৬। ঘাড় ব্যথা শুরু হলে প্রাথমিক পর্যায়ে গরম সেক নেয়া যেতে পারে। তবে একটানা সর্বোচ্চ ৩০ মিনিটের বেশি নেয়া যাবে না।
৭। গরম সেক এবং নিয়ম মেনে চলার পরেও যদি ব্যথা না কমে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
ঘাড় ব্যাথা এতকিছু
ReplyDeleteতথ্য দেওয়ার জন্য আপনাকেধন্য।।
ঘাড় ব্যাথা এতকিছু
ReplyDeleteতথ্য দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
Reply