ঘাড় ব্যথার উপকারী ব্যায়াম।
যদি আপনার ঘাড় ব্যথা থাকে তাহলে আপনার এই ব্লগ টি অবশ্যই পড়া উচিত।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে, অধিকাংশ মানুষ জীবনের কোন না কোন সময় ঘাড় ব্যথায় আক্রান্ত হয়েছেন। একটানা দীর্ঘ সময় কম্পিউটারে কাজ করা, পড়ালেখা করা বা ঘাড় ঝুঁকে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা ইত্যাদি কারণে ঘাড় ব্যথা হয়ে থাকে। এভাবে চলতে থাকলে ঘাড় ব্যথা তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। যদি প্রতি আধা ঘন্টা অন্তর অন্তর হালকা ব্যায়াম করে নেয়া যায়, তাহলে এই ব্যথার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। সাথে কিছু নিয়ম মেনে চললে ঘাড় ব্যথা প্রতিকার করা সম্ভব।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে, অধিকাংশ মানুষ জীবনের কোন না কোন সময় ঘাড় ব্যথায় আক্রান্ত হয়েছেন। একটানা দীর্ঘ সময় কম্পিউটারে কাজ করা, পড়ালেখা করা বা ঘাড় ঝুঁকে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা ইত্যাদি কারণে ঘাড় ব্যথা হয়ে থাকে। এভাবে চলতে থাকলে ঘাড় ব্যথা তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। যদি প্রতি আধা ঘন্টা অন্তর অন্তর হালকা ব্যায়াম করে নেয়া যায়, তাহলে এই ব্যথার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। সাথে কিছু নিয়ম মেনে চললে ঘাড় ব্যথা প্রতিকার করা সম্ভব।
ব্যায়াম করার জন্য আপনাকে একটি পদ্ধতি অবশ্যই জানতে হবে। কি ধরনের ব্যায়াম করা আপনার জন্য দরকার। সাথে কি করা উচিত এবং কি করা উচিত না। এই বিষয়গুলো বিস্তারিত জেনে ব্যায়াম শুরু করতে হবে।
যখন কোন রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যায়াম করা হয়, সেই ধরনের ব্যায়াম কে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ বলা হয়। থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ এবং জেনারেল এক্সারসাইজ দুইটি ভিন্ন ধরনের ব্যায়াম। জেনারেল এক্সারসাইজ করা হয়, শরীর কে ফিট রাখার জন্য। কিন্তু থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ করা হয়, নির্দিষ্ট রোগ থেকে মুক্তি লাভের জন্য। তাই আমরা বলতে পারি, ঘাড় ব্যথার ব্যায়াম এক ধরনের থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ।
ব্যায়াম কখন শুরু করা উচিত?
সময়ের উপর নির্ভর করে সাধারণত ঘাড় ব্যথাকে দুইভাগে ভাগ করা হয়। Acute neck pain বা স্বল্প মেয়াদি ঘাড় ব্যথা এবং chronic neck pain বা দীর্ঘমেয়াদী ঘাড় ব্যথা।
ব্যথা যে ধরণের হোক না কেন ,তীব্রতা বেশী থাকলে ব্যায়াম করা যাবে না। তীব্রতা কমলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ব্যায়াম শুরু করতে হবে। দীর্ঘ মেয়াদি ঘাড় ব্যথার ক্ষেত্রে থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ খুব গুরুত্তপূর্ণ।যখন আপনার চিকিৎসক ব্যায়াম করার কথা বলবে, তখনই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঘাড়ের শক্ত ভাব এবং ব্যথা কমাতে ব্যায়াম শুরু করা উচিত। খুব দীর্ঘ সময়ের জন্য বিশ্রাম নেওয়া ঠিক না। সাধারণত ২ থেকে ৩ দিনের বেশি বিশ্রাম নিলে, ঘাড়ের স্বাভাবিক নড়াচড়ার ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং ঘাড় শক্ত হতে শুরু করে।
যদি তীব্র ঘাড় ব্যথা এবং বাহু ও হাত দুর্বল লাগে, তাহলে ব্যায়াম করা যাবে না। আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। পরবর্তীতে ব্যায়াম শুরু করতে হবে।
কি ধরনের ব্যায়াম করা উচিত?
নিম্নে উল্লেখিত কিছু সহজ ব্যায়াম ঘাড় ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।১। চিবুক কাঁধ সমান্তরালে পিছনে নেয়া(Chin Tuck):
চিন টাক দাঁড়িয়ে, বসে বা শুয়েও করা যায়।
প্রাথমিক পর্যায়ে শুয়ে করাটা সবচেয়ে ভালো।চিত হয়ে দুই পা সোজা করে
শুয়ে পড়ুন।চিবুকের উপর একটি আঙুল রাখুন।আঙুলটি সরানো ছাড়াই, চিবুককে
কাঁধের সমান্তরাল বরাবর পিছনে টানুন যতক্ষণ না মাথা এবং গলার উপরে একটি চাপ
অনুভূত না হয়।সম্ভব হলে এই অবস্থানটি ৫ সেকেন্ড ধরে রাখুন।চিবুক পুনরায়
পূর্বের অবস্থানে নিয়ে আসুন।মোট 10 বার এভাবে পুনরাবৃত্তি করুন।
২। ঘাড় পিছনে ঝুকানো(Neck back tilt):
সোজা হয়ে বসুন,বসার অবস্থান থেকে মাথাকে পিছনে নিন। যতদূর পর্যন্ত নেয়া সম্ভব। ৫ সেকেন্ডের জন্য এই অবস্থানটি ধরে রাখুন। পূর্বের অবস্থানে ফিরে যান এবং ৬-১০ বার পুনরাবৃত্তি করুন।
৩। পার্শ্বে ঘাড় ঝুঁকানো(Neck side-to-side tilt)
৪। ঘাড় সামনে ঝুঁকানো(Neck tilt):
সোজা হয়ে চেয়ারে বসুন এবং মাথা বসার অবস্থান থেকে নিচু করুন। যাতে আপনার চিবুক বুক স্পর্শ করে। ৫ সেকেন্ডের জন্য এই অবস্থানটি ধরে রাখুন। পূর্বের অবস্থানে ফিরে যান এবং ৬-১০ বার পুনরাবৃত্তি করুন।
৫। ঘাড় ঘুরানো(Neck Rotation):
সোজা হয়ে বসুন। আপনার মাথা সোজা রেখে চিবুককে কাঁধ পর্যন্ত ঘুরান।এই অবস্থানটি ৫ সেকেন্ড ধরে রাখুন। এভাবে বাম ও ডান উভয় দিকে ৫-১০ বার করুন।
৬। কাঁধ স্কুইজ ব্যায়াম(Shoulder Squeeze):
মেঝেতে পা সমতল করে চেয়ারে সোজা হয়ে বসুন। আপনার কান, কাঁধ এবং কোমর এক রেখা বরাবর রাখুন।
আপনার কাঁধ কান বরাবর সবোর্চ্চ উচু করে, কনুই ৯০ ডিগ্রি বাঁকা করুন।কাঁধের ব্লেড একসাথে চেপে বাহুগুলিকে পিছনে সরিয়ে নিন।৫ সেকেন্ডের জন্য ধরে রাখুন। এবার পূর্বের অবস্থানে ফিরে আসুন। এভাবে ৫-১০ পুনরাবৃত্তি করুন।
আপনার কাঁধ কান বরাবর সবোর্চ্চ উচু করে, কনুই ৯০ ডিগ্রি বাঁকা করুন।কাঁধের ব্লেড একসাথে চেপে বাহুগুলিকে পিছনে সরিয়ে নিন।৫ সেকেন্ডের জন্য ধরে রাখুন। এবার পূর্বের অবস্থানে ফিরে আসুন। এভাবে ৫-১০ পুনরাবৃত্তি করুন।
৭। ঘাড়ের আইসোমেট্রিক ব্যায়াম:
✓ঘাড়ের আইসোমেট্রিক এক্সটেনশন বা ঘাড়কে পিছনে ভাজ করা-
সোজা হয়ে চেয়ারে বসুন। দুই হাতের আঙ্গুল একসাথে করে,মাথার পিছনে নিয়ে যান।হাত দিয়ে মাথাকে আটকে ধরুন। মাথা দিয়ে হাতে চাপ প্রয়োগ করুন।চাপ ১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন।এরপর চাপ ছেড়ে দিন। এভাবে ১০ বার পুনরাবৃত্তি করুন।
✓ঘাড়ের আইসোমেট্রিক সাইড ফ্লেকশন বা ঘাড়কে কাঁধের দিকে বাঁকানো:
সোজা হয়ে চেয়ারে বসুন। বাম হাতের তালুকে মাথার বাম পার্শ্বে রাখুন।তালু দিয়ে মাতাকে আটকে ধরুন। মাথা দিয়ে হাতে চাপ প্রয়োগ করুন।চাপ ১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন।এরপর চাপ ছেড়ে দিন। এভাবে ১০ বার পুনরাবৃত্তি করুন।একই ভাবে ডান পার্শ্বেও করুন।
✓ঘাড়ের আইসোমেট্রিক রোটেশন বা ঘুরানো:
সোজা হয়ে চেয়ারে বসুন। বাম হাতের আঙ্গুলকে কপালের বাম পার্শ্বে রাখুন। আঙ্গুল দিয়ে কপালের বাম পার্শ্বকে আটকে ধরুন। মাথা দিয়ে আঙ্গুলে চাপ প্রয়োগ করুন। চাপ ১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন। এরপর চাপ ছেড়ে দিন। এভাবে ১০ বার পুনরাবৃত্তি করুন। একই ভাবে ডান পার্শ্বে ও করুন।
✓ঘাড়ের আইসোমেট্রিক ফ্লেকশন বা সামনে ঝুকা:
সোজা হয়ে চেয়ারে বসুন। যে কোন এক হাতের তালু কপালের সামনে রাখুন। হাতের তালু দিয়ে কপালের সামনের অংশকে আটকে ধরুন। মাথা দিয়ে হাতের তালুতে চাপ প্রয়োগ করুন। চাপ ১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন। এরপর চাপ ছেড়ে দিন। এভাবে ১০ বার পুনরাবৃত্তি করুন।
এই ধরনের ব্যায়ামে ঘাড় ব্যথা
সাধারণত ২ সপ্তাহের মধ্যে কমে যায়। তবে সম্পূর্ণ ভাল হতে ৬-৮ সপ্তাহ ব্যায়াম চালিয়ে যাওয়া উচিত। সাথে কোর মাংসপেশীর অনুশীলন করতে হবে।যা আপনার ঘাড় ব্যথা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করবে। কোর মাংস পেশী বলতে আপনার পেট, পিঠ এবং নিতম্বের মাংস পেশীকে বুঝায়। যদি আপনার কোর মাংস পেশি শক্তিশালী হয় , তাহলে আপনার ঘাড়ের উপর চাপ কমে যাবে এবং আপনার ঘাড় ইঞ্জুরির হাত থেকে রক্ষা পাবে।
সোজা হয়ে চেয়ারে বসুন। দুই হাতের আঙ্গুল একসাথে করে,মাথার পিছনে নিয়ে যান।হাত দিয়ে মাথাকে আটকে ধরুন। মাথা দিয়ে হাতে চাপ প্রয়োগ করুন।চাপ ১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন।এরপর চাপ ছেড়ে দিন। এভাবে ১০ বার পুনরাবৃত্তি করুন।
✓ঘাড়ের আইসোমেট্রিক সাইড ফ্লেকশন বা ঘাড়কে কাঁধের দিকে বাঁকানো:
সোজা হয়ে চেয়ারে বসুন। বাম হাতের তালুকে মাথার বাম পার্শ্বে রাখুন।তালু দিয়ে মাতাকে আটকে ধরুন। মাথা দিয়ে হাতে চাপ প্রয়োগ করুন।চাপ ১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন।এরপর চাপ ছেড়ে দিন। এভাবে ১০ বার পুনরাবৃত্তি করুন।একই ভাবে ডান পার্শ্বেও করুন।
✓ঘাড়ের আইসোমেট্রিক রোটেশন বা ঘুরানো:
সোজা হয়ে চেয়ারে বসুন। বাম হাতের আঙ্গুলকে কপালের বাম পার্শ্বে রাখুন। আঙ্গুল দিয়ে কপালের বাম পার্শ্বকে আটকে ধরুন। মাথা দিয়ে আঙ্গুলে চাপ প্রয়োগ করুন। চাপ ১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন। এরপর চাপ ছেড়ে দিন। এভাবে ১০ বার পুনরাবৃত্তি করুন। একই ভাবে ডান পার্শ্বে ও করুন।
✓ঘাড়ের আইসোমেট্রিক ফ্লেকশন বা সামনে ঝুকা:
সোজা হয়ে চেয়ারে বসুন। যে কোন এক হাতের তালু কপালের সামনে রাখুন। হাতের তালু দিয়ে কপালের সামনের অংশকে আটকে ধরুন। মাথা দিয়ে হাতের তালুতে চাপ প্রয়োগ করুন। চাপ ১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন। এরপর চাপ ছেড়ে দিন। এভাবে ১০ বার পুনরাবৃত্তি করুন।
এই ধরনের ব্যায়ামে ঘাড় ব্যথা
সাধারণত ২ সপ্তাহের মধ্যে কমে যায়। তবে সম্পূর্ণ ভাল হতে ৬-৮ সপ্তাহ ব্যায়াম চালিয়ে যাওয়া উচিত। সাথে কোর মাংসপেশীর অনুশীলন করতে হবে।যা আপনার ঘাড় ব্যথা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করবে। কোর মাংস পেশী বলতে আপনার পেট, পিঠ এবং নিতম্বের মাংস পেশীকে বুঝায়। যদি আপনার কোর মাংস পেশি শক্তিশালী হয় , তাহলে আপনার ঘাড়ের উপর চাপ কমে যাবে এবং আপনার ঘাড় ইঞ্জুরির হাত থেকে রক্ষা পাবে।
No comments:
Post a Comment